নরসিংদীতে টানা খুনোখুনি, গোলাগুলি, ছিনতাই ও সন্ত্রাসী তৎপরতায় জনজীবন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। গত ১০ দিনে জেলার তিনটি উপজেলায় অন্তত সাতটি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও চলছে অস্ত্রের মহড়া, সাংবাদিকের ওপর হামলা এবং প্রকাশ্যে গুলি চালানোর ঘটনা। সাধারণ মানুষ বলছে, জীবন যেন অপরাধীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে।
ঘটনাপঞ্জিঃ
৮ সেপ্টেম্বর, রায়পুরা: সমীবাদ গ্রামে বিরোধের জেরে গুলিতে নিহত হন কৃষক দুলাল মিয়া (৪৫)। আহত কিশোর নাহিমসহ অন্তত ১০টি বাড়িঘর ভাঙচুর হয়, পুরুষরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
১০ সেপ্টেম্বর, শিবপুর: পানি নিষ্কাশন নিয়ে বিরোধের জেরে চাচার হাতে নিহত হন দুই ভাই সোহাগ (৪০) ও রানা (৩৫)।
১৪ সেপ্টেম্বর, রায়পুরা: ব্যবসায়ী মানিক মিয়াকে কুপিয়ে হত্যা করে নদীর পাড়ে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।
১৮ সেপ্টেম্বর, রায়পুরা: পারিবারিক কলহে মানিক মিয়ার ছুরিকাঘাতে নিহত হন স্ত্রী শিউলি আক্তার (৩০)।
একই দিন ভোরে মুরাদনগর গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গুলিতে নিহত হন ইদন মিয়া (৬০), আহত অন্তত পাঁচজন।
১৯ সেপ্টেম্বর, নরসিংদী সদর: আলোকবালীর জুমার নামাজ চলাকালে প্রতিপক্ষের গুলি ও কুপিতে নিহত হন গৃহবধূ ফেরদৌসি আক্তার (৩৫)। তিনি স্থানীয় বিএনপির এক গ্রুপের কর্মীর স্ত্রী ছিলেন।
পুলিশ সুপার মো. মেনহাজুল আলম জানান, “বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ড পারিবারিক। প্রতিটি ঘটনায় মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে। অপরাধী যেই হোক, আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা বসে নেই।”
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তার নিয়েই বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ড ঘটছে। পুলিশকে কোথাও দেখা যায় না, দেখা গেলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না। ফলে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
জেলায় টানা হত্যাকাণ্ডে সাধারণ মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কেউ সন্ধ্যার পর বাইরে বের হতে সাহস করছে না।
এলাকাবাসীর প্রশ্ন— “নরসিংদীতে কি আর নিরাপদে বেঁচে থাকা যাবে?”